Dhaka 9:44 am, Friday, 13 June 2025
[gtranslate]

সম্পাদকীয়: অসহনীয় গরম: জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর বার্তা

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশজুড়ে যে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে, তা কোনো স্বাভাবিক গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ নয়। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বাস্তব ও ভয়াবহ সংকেত। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা গত কয়েক দশকের তুলনায় অনেক বেশি। তাপদাহের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ, কৃষিকাজ ব্যাহত, শ্রমজীবী মানুষ বিপর্যস্তসব মিলিয়ে জনজীবন প্রায় অচল।

এই চরম গরমের প্রধান কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ, বন উজাড়, অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার, জ্বালানি অপচয়, নির্বিচারে নদী-নালা দখল ও দূষণ এসবের যৌথ প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, জলবায়ুর স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে যাচ্ছে।

আমরা ভুলে যাই, এই সংকট শুধু কোনো রাষ্ট্র বা অঞ্চলের একার নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৈশ্বিক, এবং এর বিরূপ ফল ভোগ করছে সবচেয়ে দুর্বল ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যেমন বাংলাদেশ। অথচ এই দেশেরই কার্বন নিঃসরণ সবচেয়ে কম। তবুও, তীব্র গরম, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, এবং কৃষি উৎপাদনে সংকট সবকিছুতেই আমরা আক্রান্ত।

এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন:

ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা
গাছ লাগানো, পানি ও বিদ্যুৎ অপচয় না করা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিহার করা।

সরকারি নীতির কঠোর প্রয়োগ
শিল্প কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপণে উৎসাহ, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা।

আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো কণ্ঠস্বর
উন্নত দেশগুলোকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ।

শিক্ষা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি
স্কুল থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে পরিবেশ শিক্ষার বিস্তার।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়, বর্তমানের বাস্তবতা। এখনই যদি আমরা পদক্ষেপ না নেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে যাবে।

এখন সময় নিজের জন্য, সমাজের জন্য, প্রকৃতির জন্য জেগে ওঠার। গরম হাওয়ার প্রতিটি শ্বাস যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই পৃথিবীটাকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সম্পাদকীয়: অসহনীয় গরম: জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর বার্তা

Update Time : 10:13:52 pm, Tuesday, 27 May 2025

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশজুড়ে যে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে, তা কোনো স্বাভাবিক গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ নয়। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বাস্তব ও ভয়াবহ সংকেত। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যা গত কয়েক দশকের তুলনায় অনেক বেশি। তাপদাহের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ, কৃষিকাজ ব্যাহত, শ্রমজীবী মানুষ বিপর্যস্তসব মিলিয়ে জনজীবন প্রায় অচল।

এই চরম গরমের প্রধান কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ, বন উজাড়, অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার, জ্বালানি অপচয়, নির্বিচারে নদী-নালা দখল ও দূষণ এসবের যৌথ প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে, জলবায়ুর স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে যাচ্ছে।

আমরা ভুলে যাই, এই সংকট শুধু কোনো রাষ্ট্র বা অঞ্চলের একার নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৈশ্বিক, এবং এর বিরূপ ফল ভোগ করছে সবচেয়ে দুর্বল ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যেমন বাংলাদেশ। অথচ এই দেশেরই কার্বন নিঃসরণ সবচেয়ে কম। তবুও, তীব্র গরম, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, এবং কৃষি উৎপাদনে সংকট সবকিছুতেই আমরা আক্রান্ত।

এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন:

ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা
গাছ লাগানো, পানি ও বিদ্যুৎ অপচয় না করা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিহার করা।

সরকারি নীতির কঠোর প্রয়োগ
শিল্প কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপণে উৎসাহ, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা।

আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো কণ্ঠস্বর
উন্নত দেশগুলোকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ।

শিক্ষা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি
স্কুল থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে পরিবেশ শিক্ষার বিস্তার।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আর ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়, বর্তমানের বাস্তবতা। এখনই যদি আমরা পদক্ষেপ না নেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে যাবে।

এখন সময় নিজের জন্য, সমাজের জন্য, প্রকৃতির জন্য জেগে ওঠার। গরম হাওয়ার প্রতিটি শ্বাস যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই পৃথিবীটাকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদেরই।