পবিত্র হজের মহাসমারোহ আজ। “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক..” — এই ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাতের পবিত্র ময়দান। সারাবিশ্বের প্রায় ১৫ লাখ মুসলমান এবারের হজে অংশ নিচ্ছেন। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁরা এসেছেন নানা দেশ থেকে, একত্রিত হয়েছেন ইসলামের অন্যতম পবিত্র ফরজ পালন করতে।
বুধবার মিনায় হাজীদের জমায়েতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা
বুধবার মিনায় হাজীরা জড়ো হয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। রাতে তাঁরা ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন, কাঁদেন, দোয়া করেন, মাফ চান। বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁরা রওনা হন আরাফাতের ময়দানে, যা মক্কা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। অনেকে পায়ে হেঁটে, কেউ হুইলচেয়ারে, কেউ যানবাহনে করে পৌঁছান এই পবিত্র স্থানে।
আজ ৯ জিলহজ – হজের মূল দিন, ইয়াওমুল আরাফা
আজকের দিনটি ‘ইয়াওমুল আরাফা’ নামে পরিচিত। এই দিনকে হজের মূল দিন বলা হয়। আরাফাতে উপস্থিত হওয়া হজের একটি ফরজ রুকন। এদিন আরাফাতের ময়দানেই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দিয়েছিলেন বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ, যা মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে রয়েছে।
বাংলাসহ ২০ ভাষায় অনূদিত হচ্ছে হজের খুতবা
এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দিবেন মসজিদুল হারামের খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ। এই খুতবা বাংলাসহ ২০টি ভাষায় অনূদিত হবে। বাংলা অনুবাদ করবেন চারজন বাংলাদেশি আলেম—ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ও নাজমুস সাকিব—যাঁরা সবাই উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
আরাফার দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য
-
এ দিনটিকে ইসলামে বলা হয় রহমত ও মুক্তির দিন।
-
দ্বীন পূর্ণতার ঘোষণা আজকের এই দিনে নাজিল হয়েছিল সূরা মায়েদার ৩নং আয়াতে:
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।”
-
রাসূল (সা.) বলেন,
“আরাফা দিবসের মতো কোনো দিন নেই। এ দিনে আল্লাহ অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (সহিহ ইবনে হিব্বান)
-
আরাফার ময়দানে যারা উপস্থিত হন না, তাদের জন্যও এ দিনের দোয়া ও রোজার রয়েছে বিশেষ ফজিলত। তবে হাজীদের জন্য এখানে অবস্থান করা ফরজ।
মুজদালিফা, মিনায় ফিরে কাজের ধারা
সূর্যাস্তের পর হাজীরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করে রওনা হবেন মুজদালিফার দিকে। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে আদায় করবেন এবং রাতে খোলা আকাশের নিচে থাকবেন। এরপর শয়তানকে পাথর মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করে আবার ফিরবেন মিনায়।
হজের চূড়ান্ত ধাপগুলো
-
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ
-
কোরবানি করা
-
মাথা মুণ্ডন
-
তাওয়াফে জিয়ারত
এরপর হাজীরা ১১ ও ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর মারবেন এবং সবশেষে বিদায়ি তাওয়াফের মাধ্যমে শেষ করবেন হজের আনুষ্ঠানিকতা।